আশীর্বাদ
সুকান্ত স্কুল থেকে ফিরছে। মুন্সিগঞ্জ প্ল্যাটফর্মে উঠে স্টেশনের বড় আয়তক্ষেত্রাকার কালো ডিজিটাল ঘড়িটার দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে দেখল ট্রেন আসতে এখনও বারো মিনিট বাকি।
ও প্ল্যাটফর্মের শেডের বামদিকের চায়ের দোকানটার সামনে এল। অল্প অল্প শীত পড়েছে। এইসময় এককাপ চা মানে দারুণ ব্যাপার।
যেতেই এক সাদা শাড়ি পরা শীর্ণকায়া ভিখারিণী ওর সামনে এসে বলল, ‘বাবা এককাপ চা খাওয়াবে?’
সুকান্ত একবার তাকিয়ে দেখল তাঁর দিকে। তারপর দোকানীর দিকে ফিরে বলল, ‘এনাকে এককাপ চা দিয়ে দাও।’
চাঅলা সাথে-সাথেই চা দিল। চা-টা হাতে নিয়ে ভিখারিণী সুকান্তকে আশীর্বাদ করল, ‘বাবা ঈশ্বর তোমার অনেক সুখ-শান্তি দিক।’
শুনে সুকান্তর ভালোই লাগল। মনে তৃপ্তি অনুভব করল।
এই ঘটনা কাউকে ও বলেনি। এমনকী ওইদিন প্ল্যাটফর্মে হাজির ওর কোনও কলিগকেও না।
বাড়ি ফিরে মুখহাত ধুয়ে দুটো ভাত খেল। এই সময়ে ও ভাত খায় না। স্কুলে রান্না হয়। ক্যান্টিন মতো আছে। সেখানে খায়। ফলে বাড়ি ফিরে ভাত খাওয়ার দরকার হয় না। সন্ধ্যায় কিছু টিফিন। তারপর একেবারে রাতে ডিনার। আজ মটন হয়েছে। তাই খেল।
ছেলেটা চার বছরের। এখন ঘুমোচ্ছে ঘরে। সুকান্ত মৌমিতাকে বলল, ‘গল্পটা কেমন লাগল?’
মৌমিতা বলল, ‘ফাটাফাটি। যা লিখেছ!’
সুকান্ত স্ত্রীর থেকে তার লেখকসত্তার উৎকর্ষের স্বীকৃতি পেয়ে মনে-মনে হাসল। তারপর তার নিজের রাইটিং রুমে গেল। নরম বিছানায় গা-টা এলিয়ে দিল। এই রুমে একটা ভালো খাট, একটা শো-কেস, একটা আলমারি আর একটা লেখারটেবিল, তাতে কম্পিউটার এই কয়টা জিনিস আছে।
সুকান্ত মোবাইল খুলল। কয়েকটা মেল এসেছে। মেল বক্স খুলতেই দেখল, আরে! এই মেলটা যে ওই “সৃজন প্রকাশনী” থেকে পাঠিয়েছে!
খুলে দেখল তাতে লেখা —
প্রিয় লেখক,
আপনি যে উপন্যাসের পাণ্ডুলিপিটি পাঠিয়েছিলেন সেটি আমাদের সম্পাদকমণ্ডলীর দ্বারা বইয়ের আকারে প্রকাশের জন্য মনোনীত হয়েছে। আপনাকে আগামী সোমবার আমাদের অফিসে এসে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এই অবধি পড়ে সুকান্ত খুশিতে পাগল হয়ে গেল। প্রথম উপন্যাস। আগে কত গল্প প্রবন্ধ লিখেছে। কিন্তু বই প্রকাশ হয়নি। এবার বই বার হবে। সুকান্ত তাহলে সত্যি-সত্যি একজন লেখক হয়ে গেল! ঈশ্বর ওর দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন তাহলে এইবার।
মৌ-কে ডাকবে। কিন্তু তার আগে ও এক মুহূর্তের জন্য চুপ হয়ে গেল।
আজ বিকেলের ওই ভিখারিণীর কথা মনে পড়ে গেল— “ঈশ্বর তোমার অনেক সুখ-শান্তি দিক।”
বার্তা - অসহায় মানুষকে সাহায্য করলে তাঁর আশীর্বাদ পাওয়া যায়, যা খুবই কার্যকরী।
Image Source : Pixabay
প্রিয় পাঠক, গল্পটা কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না।
ReplyDelete