আঁখিতে প্রেম
কুহেলি আর সৃজিতা কলেজ থেকে সন্ধেবেলায় বাড়ি ফিরছে। বিদ্যাসাগর কলেজে ইংলিশ অনার্স পড়ে এরা দুই বান্ধবী। কলেজ সেরে ফিরতে-ফিরতে এই শীতের দিনে সন্ধেই হয়ে যায়।
সবে পাইকপাড়া মানে ওদের পাড়ার সীমানায় পা দিয়েছে, সৃজিতা কুহেলিকে উচ্ছ্বসিত সুরে বলল, ‘এইবার তোর মন-ভালো পাগলার দেখা মিলবে। পাড়ায় ঢুকে গেছি যে। আর সামনেই যে আমাদের সোনালি সঙ্ঘ। দেখবি'খন সে এতক্ষণ হয়ত ক্লাবের মাচায় বসে সিগারেট টানছে।’
কুহেলি বলল, ‘কী করে বলল সেদিন, তোমায় দেখলে আমার মন ভালো হয়ে যায়!’
সৃজিতা বলল, ‘ছেলেটা মন্দ নয়। বিহ্যাভিয়ার ভালো। পাড়ায় সুনাম আছে। কোয়ালিফায়েড এবং প্রতিষ্ঠিত।’
কুহেলি বলল, ‘ওদের বড় বিজনেস বল?’
সৃজিতা বলল, ‘যারা কাজের গ্ল্যামার দেখে তাদের কাছে ওদের দাম নেই। ওরা শপিং মল বা নামী রেস্টুরেন্টের মালিক নয়। তবে ওরা কৃষিজ সার বিক্রি করে ওদের দোকান থেকে যা আয় করে, আমার যতদূর জানা আছে পাঁচজন চাকরিজীবীর যা মোট ইনকাম তার চেয়ে ওদের ইনকাম বেশি। তুই হ্যাঁ-টা বলেই দে। ও তো তোকে প্রপোজ করেইছে। তুই ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছিস না। ছেলেটা দেখবি রোজকার মতো আজও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে তোর দিকে। ও ওর মনের সত্যি কথাটা বলেছে।’
‘দাঁড়া আগে একটু বাজিয়ে দেখে নিই। তারপর দেখছি,’ বলল কুহেলি।
সৃজিতা বলল, ‘যা ইচ্ছে কর, কিন্তু ছেলেটাকে কষ্ট দিস না।’
কুহেলি বলল, ‘তোর তো দেখছি দরদ উথলে উঠেছে।’
সৃজিতা বলল, ‘কী যে বলিস।’
ক্লাবের কাছাকাছি আসতেই ওরা দেখল সোহম হাতে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে ওদের দিকে কিছুটা দূর হতে তাকিয়ে আছে। কুহেলি সৃজিতাকে বলল, ‘ওই নাটক শুরু হয়ে গেছে। দ্যাখ কেমন তাকিয়ে আছে। যেন গিয়ে মাথায় গাঁট্টা মারি।’
সৃজিতা বলল, ‘নাটক নয়।’
কুহেলি বলল, ‘তবে কী শুনি...’
সৃজিতা বলল, ‘রিয়্যাল লাভ!’
এবার ওর সামনে এসে সৃজিতা বলল, ‘এই সোহমদা, কুহেলি কিছু বলবে তোমাকে।’
সোহম শুধু বলল, ‘হ্যাঁ।’
কুহেলি বলল, ‘আগে ক'টা রিলেশন করেছ চাঁদু?’
সৃজিতা ফিসফিস করে কুহেলির কানের কাছে দাঁত কড়মড় করে বলল, ‘তোর থেকে সিনিয়র রে গাধা।’
কুহেলি বলল, ‘তুই চুপ কর।’
সোহম শান্ত গলায় বলল, ‘একটা। তিন মাসের সম্পর্ক। সে আমায় ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে। নাম অমৃতা। দাসপাড়ায় বাড়ি।’
‘আমি যে তোমাকে ধোঁকা দেব না সে গ্যারান্টি তুমি কোথায় পেলে বস?’ কুহেলির সরাসরি প্রশ্ন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হ্যান্ডসাম ছেলে সোহমকে।
সোহম বলল, ‘ভাগ্যে যা থাকবে মেনে নিতে হবে। কপালের সাথে লড়াই করে জেতা যায়?’
শেষ কথাটায় কুহেলি আটকা পড়ে গেল। সোহমদা ছেলেটা কত সৎ। কুহেলি বলল, ‘তিনদিন পরে জানাব রেজাল্ট। আজ ইন্টারভিউ শেষ। আর অত সিগারেট খাও কেন? মরার ইচ্ছা হয়েছে?’
সোহম বলল, ‘এ আমার ব্যথার ওষুধ। তবে তুমি বললে আমি ছেড়ে দেব।’
ওরা কথা শেষ করে ফিরছে। কুহেলি শুধু বলল, ‘সৃজিতা, একটা জিনিস খেয়াল করলি? সোহমদা কিন্তু ওর আগে কোনো রিলেশন ছিল কি না জিগ্যেস করতেই সত্যি কথাটা কেমন সহজে বলে দিল। ম্যাক্সিমাম ছেলেরা কিন্তু এই ব্যাপারে সাধু সাজার চেষ্টা করে।’
‘ওকে বিয়ে করলে তুই সুখী হবি,’ শান্তভাবে বলল সৃজিতা।
‘শুধু মা-টাকে নিয়ে সমস্যা রে...,’ কুহেলি অসহায় আর্তি।
‘কাকিমাকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার ওপর ছেড়ে দে,’ সৃজিতা ওকে সাহস যোগাতে চেষ্টা করল।
কুহেলি বলল, ‘তাহলে সাগরে ঝাঁপটা দিয়েই দি বল।’
সৃজিতা বলল, ‘উইদাউট হেজিটেশান।’
‘কালকেই ওকে আমার কনসেন্ট জানিয়ে দেব,’ বলল কুহেলি।
আজ বাড়ি ফিরে অল্প কয়টি খেয়ে কিছুটা পড়ে বিছানায় চলে গেল। মা বলল, ‘ডিনার করবি না?’ ও বলল, ‘না, পেট ভরা আছে।’
রাতে ওর ঘুম এল না। রাত একটা বাজল, দুটো, আড়াইটা। কত কী মনে আসছে ওর।
যেন সোহমদার সাথে পাশাপাশি হাঁটছে, মেলায় যাচ্ছে, কলকাতার কফি হাউসে যাচ্ছে, কলেজ স্ট্রিট যাচ্ছে, সিনেমা দেখতে যাচ্ছে। আরও কত কী।
পরক্ষণেই মনে হল এভাবে জাগা চলবে না। ওর ভেতরের মনটা ওকে বলতে লাগল, ‘এভাবে রাত জেগে মুখের গ্ল্যামার নষ্ট করলে তার মনটা ভালো করবে কীভাবে তুমি। সে যে তোমার পাগল-প্রেমিক। ঘুমিয়ে পড়ো কুহেলি। ঘুমিয়ে পড়ো। আর জেগে থেকো না। তার আঁখিতে যে অনেক প্রেম।’
বার্তা - প্রকৃত প্রেম অনেকসময় নির্বাক হয়।
Image Source : Pixabay
সুহৃদ, গল্পটি কেমন লাগল জানাবেন...
ReplyDelete